রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:৩০ অপরাহ্ন
কুমিল্লা প্রতিনিধি, কালের খবর :: কুমিল্লার দেবীদ্বারে ১৬ বছর বয়সী এক কিশোরীকে তার পূর্ব পরিচিত এক যুবক বিয়ের প্রলোভনে মুরাদনগর উপজেলার বাবুটিপাড়া গ্রাম থেকে ডেকে নিয়ে তার অপর দু’সহযোগী সহ ৩ বখাটে যুবক রাতভর পালাক্রমে ধর্ষণ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনাটি ঘটে গত ২৯ জুলাই রোববার রাতে দেবীদ্বার উপজেলার ভাণী ইউনিয়নের খাদঘর গ্রামে।
পুলিশ, ভিক্টিম ও স্থানীয়রা জানান, মুরাদনগর উপজেলার বাবুটিপাড়া গ্রামের ভিক্টিম কিশোরী (১৬) গত রোববার বিকেলে তার মায়ের সাথে রাগ করে চান্দিনা উপজেলায় নানার বাড়ির উদ্দেশ্যে বের হয়। এ সময় পূর্ব পরিচিত দেবীদ্বার উপজেলার ভাণী ইউনিয়নের খাদঘর গ্রামের বাতেন (২৫) নামে এক যুবকের সাথে ফোনে কথা বলার এক পর্যায়ে মায়ের সাথে রাগ করে নানার বাড়ির উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে যাওয়ার বিষয়টি জানতে পারে। এ সুযোগে ভিক্টিম কিশোরীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে রাত ৮টায় নিজ গ্রামে ডেকে নিয়ে যায়। ভিকটিম খাদঘর ব্রীজের কাছে পৌঁছলে ওখান থেকে কিছুটা দুরে জাহাঙ্গীর চৌকিদারের বাড়ীর পার্শ্বে একটি নির্জন ভরাট জমিতে রাত সাড়ে ৮টায় তাকে নিয়ে যায়। ওখানে জোরপূর্বক কিশোরীকে ধর্ষণ করে বাতেন।
রাত সাড়ে ৯টায় খাবার নিয়ে আসার কথা বলে বাতেন ভিক্টিমের কাছ থেকে কৌশলে সটকে পড়ে এবং তার অপর ২ সহযোগী মনির(২৮) ও কাশেম(৩৬) কে ডেকে এনে মেয়েটির কাছে পাঠায়। মনির ও কাশেম রাত আনুমানিক সাড়ে ১০টায় তাদের এক নিকট আত্মীয়ের বাড়ির কথা বলে ঘটনাস্থল থেকে প্রায় দেড়শত গজ দূরে সুরাইয়া বেগম নামে এক মহিলার বাড়িতে ভিক্টিমকে রাত্রী যাপনের জন্য নিয়ে যায়। ওখানে তাদের টিনশেড ঘরের একটি কক্ষে রাত্রী যাপনের ব্যবস্থা করে সুরাইয়া বেগম পাশের নিজ কক্ষে ঘুমিয়ে পড়েন। এ সুযোগে পাশের কে অবস্থানরত মনির প্রথমে এবং পরে কাশেম পালাক্রমে ভিকটিম কিশোরীটিকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। এ সময় ভিকটিম অনেক কান্নাকাটি ও অনুনয় বিনয় করেও আসামীদের থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারেনি।
মনির কর্তৃক ভিকটিমকে ধর্ষণ করাকালে আসামী বাতেন ও কাশেম ঘরের বাইরে অপেক্ষায় থাকে। পরে রাত আনুমান ১২টার দিকে মনির ও বাতেন এবং রাত আনুমান পৌনে ১টায় কাশেম ভিকটিমকে আবারো ধর্ষণ শেষে ভিক্টিম যাতে কোথাও যোগাযোগ না করতে পারে তাই তার মোবাইল ফোনটি নিয়ে চলে যায়।
পরদিন (৩০জুলাই সোমবার) সকালে আশ্রিত বাড়ির মালিক সুরাইয়া বেগমকে ভিক্টিম ৩ বখাটে যুবক কর্তৃক ধর্ষণের শিকার হওয়ার তথ্য জানায়। পরে সুরাইয়ার চাপে আসামী কাশেম ভিকটিমের মোবাইল ফোনটি ফেরত দিলে ভিকটিম তার ভাবী লাইলীকে মোবাইলে নিজের অবস্থানের সংবাদ দেয়। লাইলী লোকজনের সহায়তায় ভিকটমকে খাদঘর গ্রামস্থ ঘটনাস্থল’র ঘর থেকে বাড়ী ফিরিয়ে নিয়ে গেলে ভিকটিম তার মায়ের নিকট ঘটনার বিস্তারিত প্রকাশ করে।
ঘটনার দু’দিন পর ১আগষ্ট বুধবার বিকেলে ভিক্টিম তার মা’কে নিয়ে দেবীদ্বার থানায় এসে লিখিত অভিযোগ করেন। ভিক্টিমের মা’ বাদী হয়ে গণধর্ষনের অভিযোগে নারী নির্যাতন দমন আইনের ৯(৩) ধারায় খাদঘর গ্রামের মৃতঃ শাহ আলমের পুত্র মোঃ আবদুল বাতেন(২৫), মোঃ দুধ মিয়া’র পুত্র মোঃ মনির(২৮), মৃত আবদুল ওহাব’র পুত্র মোঃ আবুল কাশেম(৩৬) সহ ৩ বখাটে যুবককে অভিযুক্ত করে মামলা দায়ের করেন।
মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক তদন্ত সরকার আব্দুল্লাহ-আল-মামুন জানান, বৃহস্পতিবার সকালে আসামীদের কুমিল্লা বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট রোকেয়া বেগম’র আদালতে হাজির করলে আসামীরা ধর্ষনের ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে। উক্ত স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ১৬৪ধারায় রেকর্ড পূর্বক আসামীদের জেল হাজতে প্রেরনের নির্দেশ দেন। একই সাথে ভিক্টিম’র ডাক্তারী পরীক্ষা শেষে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট রোকেয়া বেগম’র নিকট ভিক্টিমের ২২ধারায় জবানবন্দি রেকর্ড করেন।
ওই ঘটনায় দেবীদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মিজানুর রহমান’র নেতৃত্বে পুলিশ পরিদর্শক তদন্ত সরকার আব্দুল্লাহ-আল-মামুন, উপ-পরিদর্শক(এসআই) প্রেমধন মজুমদার, উপ-পরিদর্শক(এসআই) খালেদ মোশারফ, উপ-পরিদর্শক(এসআই) মোশারফ হোসেন সহ টিম দেবীদ্বার ভানী ইউনিয়নের খাদঘর গ্রামে দ্রুতগতিতে অভিযান চালিয়ে ঘটনায় জড়িত অভিযুক্ত উল্লেখিত ৩ আসামীকেই গ্রেফতার করেন।
দেবীদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মিজানুর রহমান জানান, ভিক্টিমের স্বীকারোক্তিতে তার মা বাদী হয়ে মামলা দায়ের’র কয়েক ঘন্টার মধ্যেই টিম দেবীদ্বার অভিযান চালিয়ে ৩ ধর্ষককে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি এবং ধর্ষিতা ভিক্টিমকে সামনে রেখে ধর্ষকদের জিজ্ঞাসাবাদে ৩ আসামী অকপটে পালাক্রমে ধর্ষণের দায় স্বীকার করে ঘটনার বর্ণনা দেয়। বৃহস্পতিবার সকালে ভিক্টিমের ডাক্তারী পরীক্ষা এবং আসামীদের কোর্ট হাজতে চালান করা হয়েছে।